বিয়ে বিষয়ক
❑
তোমাকে দেখতে যাব এমন চারশত গোলাপ ফুটে আছে বাগানে
বা-পাঁজরে একটা সঞ্চয়ী ব্যাংক বিঁধে আছে, রঙ উঠা জামায় আটকে থাকা সেলাইয়ের মতো পুরনো এক পয়সা, তিন পয়সা, পাঁচ পয়সা অসুখের বেদনা নিয়ে—অনন্তকাল।
কেউ কেউ বলছে তুমি নাকি কখনো বউ হতে পারবে না। কেননা রোদে পুড়তে পুড়তে তোমার গায়ের রঙ আরো কালো হতে হতে সুন্দর পালিয়ে গেছে,
তুমি সারাদিন ছককাটা ফসলের জমিনে কাকতাড়ুয়া,
তুমি সারাদিন পাঠশালার নতুন কাঠের বেঞ্চে কলমের দাগটানা আঁকাআঁকি,
তুমি সারাদিন রান্নাঘরে শুকনো পাতিলের পাশে ক্লান্ত জল,
তুমি সারাদিন অসুস্থ বাবার ঘরে মায়ের ওড়না বিছানো টেবিলে একগাদা ট্যাবলেটের নাম,
তুমি সারাদিন বৃদ্ধ মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বটবৃক্ষ, তুমি সারাদিন ছোট ভাইয়ের ক্যালেন্ডারে বাড়তে থাকা নতুন নতুন আবদার,
তুমি সারাদিন ভাঙা গলায় গাওয়া পাখির তুমুল ক্যাচক্যাচানি গান,
তুমি সারাদিন তোমার শোয়ার ঘরে পড়ে থাকা আধখোলা কবিতার বই, একমাত্র আয়নায় শাড়ি পরিহিত, ভুল কপালে কালো টিপ পড়ে থাকা মেয়েটির আরেকটি প্রতিবিম্ব।
তারা বলে এখন আর বিয়ে করার সময় নাই, যুবতী বয়সে তোমার হাতের ঘড়ি খোয়া গেছে।
অথচ দেখো আমি এখনো তোমার ফসলের ঘ্রাণে বসে আছি, তোমার পাঠশালা বন্ধ—তবুও আমি পথে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার গান আর শুনি না
শুনেছি অসুখ বাড়তে তোমার বাবা বেঁচে গেছেন,
বয়স বাড়তে বাড়তে বেঁচে গেছেন মা,
আবদার বাড়তে বাড়তে ছোট ভাইয়ের ক্যালেন্ডার ফুরিয়ে গেছে, আরো শুনেছি চোখের নিচে না পাওয়ার কাজল বাড়তে বাড়তে তোমারও চেহারা অব্যবহৃত আয়না হয়ে গেছে।
এখনো আমার চাকরি নাই, ঘর নাই, খাবার নাই, তোমার মতো মানুষ নাই এইসব শুনতে শুনতে
এক বৃহস্পতিবার এক নামিদামি ব্যাংকে আমার চাকরি হয়ে যায়।
এখনো সারাদিন আমি কাজ করি, খাই, হাসি, গাই, সন্ধ্যে হলেই বাড়ি ফিরি। ঘটককে ফোন দেই। বিয়ে করব বলে চিল্লাই। ঘটক তোমাকে খুঁজে পায় না, লোকজন আমাকে খুঁজে পায় না।৷ রাত গভীর হয়, জোছনা বাড়ে, মাতলামি করতে করতে আমি তোমার কবরে ঘুমিয়ে পড়ি।
সাদাফ আমিনের কবিতা : দুর্দিন ম্যাগাজিন
Tags
Poem